বাল্যবিয়ের হাত থেকে বাঁচতে মোমিনার যত আঁকুতি

192

সরাইল প্রতিনিধি : ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল উপজেলা পানিশ্বর ইউনিয়নের বেড়তলা উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী মোমিনা বেগম। বাঁচার আকুতি জানিয়ে সে জেলার সরাইল উপজেলা ও আশুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে চিঠি দিয়েছে।

মোমিনা বেগম আশুগঞ্জ উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের বগুইর গ্রামের মরহুম নুরুল আমীনের মেয়ে। সরাইলে বোন জামাইয়ের বাড়িতে থেকে সে পড়াশুনা করে। নবম শ্রেণির ওই ছাত্রীর ক্লাসে রোল ২। নিয়মিতই সে স্কুলে যাওয়া-আসা করত।

গত চার বছর আগে মোমিনার বাবা খুন হন। বখাটেদের ভয়ে মোমিনা গত এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে বিদ্যালয়ে আসছে না। গত তিন দিন আগেও তাকে জোরপূর্বক তুলে নেয়ারও চেষ্টা করা হয়েছে। এ  ভীতকর অবস্থায় মোমিনার মা এ বিয়েতে রাজি হয়ে যান।

কিন্তু মোমিনা পড়তে চায়, তাই বিয়েতে রাজি নয়। তার এক বড় বোনও বিয়ের বাকি রয়ে গেছে। এ অবস্থায় গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে সে নিজে এসে সরাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে বাল্যবিয়ে থেকে রক্ষার আবেদন জমা দেয়। এর আগে একই চিঠি সোমবার আশুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছেও দেয়।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো চিঠিতে মোমিনা বেগম উল্লেখ করে, আশুগঞ্জ উপজেলার বগইর গ্রামের শেখ সাদি ভূঁইয়ার ছেলে উছমান ভূঁইয়া প্রায়ই তাকে উত্ত্যক্ত করে। এ ঘটনায় তার পরিবারের কাছে নালিশ দিলে বখাটে উছমান তাকে জোরপূর্বক বিয়ে করার ঘোষণা দেয়। কয়েকদিন আগে উছমানের পক্ষে গ্রামের ইউপি সদস্য নূরুল ইসলাম, সজিব ভূঁইয়া, আকবর ভূঁইয়াসহ কয়েকজন তার বাড়িতে গিয়ে তার মাকে চাপ সৃষ্টি করে উছমান ভূঁইয়ার সাথে তার  মেয়ের বিয়ের কথা আপসরফা করেন। এ অবস্থায় মোমিনা সরাইল উপজেলার কাটানিশার গ্রামে তার ভগ্নিপতি জাবেদ মিয়ার বাড়িতে আশ্রয় নেয়। গত ৩ আগস্ট উছমান ভূঁইয়া সেখান থেকে তাকে ধরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে।

চিঠিতে মোমিনা বেগম আরো উল্লেখ করে, তার বিয়ের বয়স হয়নি। সে পড়ালেখা করতে চায়। এ ছাড়া তার এক বড় বোনের এখনো বিয়ে হয়নি। সে বোন আশুগঞ্জ উপজেলার তিন্নি আনোয়ার মহিলা কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রী। মোমিনা আক্তার বাল্যবিয়ের হাত থেকে রক্ষা পেতে সকলের সহযোগিতা কামনা করে।

বেড়তলা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রতন কুমার দেব জানান, মোমিনা মেধাবী ছাত্রী। তার দেওয়া একটি চিঠি পড়ে সবাই জানতে পারে তাকে বিয়ে দেয়ার প্রস্তুতি চলছে। কিন্তু সে এ বিয়েতে রাজি নয়। এ জন্য সে গত আট দিন ধরে স্কুলে আসছে না।

আশুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নাজিমুল হায়দার জানান, স্কুলছাত্রী মোমিনা বেগমের চিঠি পাওয়ার পর উছমানসহ সংশ্লিষ্টদের ডেকে আনা হচ্ছে। সরাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ এস এম মোসা জানান, মোমিনাকে এ বিষয়ে সকল প্রকার সহযোগিতা করা হবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন