টিনের চালা, কাঁচা ঘর, দিনমজুর বাবা, মায়ের পুঁতির ব্যাগ সেলাইয়ের আয়—এই কঠিন বাস্তবতা ডিঙিয়ে এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার সুহাতা গ্রামের মেয়ে প্রমা রাণী কর্মকার।
ভোলাচং উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী প্রমা, যে এখন দারিদ্র্যের কাছে হেরে গিয়ে কলেজে ভর্তির দুশ্চিন্তায় চোখের জল ফেলছে। তার সব ইচ্ছা, মেধা, সাধনা থমকে গেছে অর্থের অভাবে।
প্রমার বাবা শিবলু কর্মকার জানান, “আমার মেয়েটা ছোটবেলা থেকেই বইয়ের প্রতি আসক্ত। পেটে ভাত না থাকলেও ও বই ছাড়তে পারত না। ধার-দেনা করে চেষ্টা করেছি মেয়েটার পড়াশোনা চালিয়ে নিতে। এখন তো আর পেরে উঠছি না। কলেজে ভর্তি, বই, যাতায়াত—সবকিছুতেই টাকা দরকার, যেটা এখন আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়।”
মেধাবী এই শিক্ষার্থীর স্বপ্ন একদিন ডাক্তার হওয়া। নিজের গ্রামবাসীর পাশে দাঁড়ানো। কিন্তু সেই স্বপ্ন এখন আটকে গেছে টাকার কাছে।
প্রমা জানান, “বাবা আর চালাতে পারবে না। আমি ৯ম শ্রেণি থেকে দুইটা টিউশন করিয়ে ৬০০ টাকা আয় করি। সেটা দিয়েই নিজের খরচ চালাতাম। এখন কলেজের খরচ, বইয়ের দাম, যাতায়াত—সব মিলে ব্যয় অনেক। কোথা থেকে আসবে সেই টাকা?”
চোখে জল নিয়ে প্রমা বলেন, “আমি ডাক্তার হতে চাই। কিন্তু জানি না কীভাবে সম্ভব হবে। বাবার সামর্থ্য নেই, মা সংসার চালায় কাথা সেলাই আর পুঁতির ব্যাগ বানিয়ে। আমার এখন শুধু একটা চাওয়া, কেউ যদি পাশে দাঁড়ায় তাহলে হয়তো আমি সামনে এগোতে পারব। না হলে আমার স্বপ্নটা স্বপ্নই থেকে যাবে।”
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অঞ্জনা রাণী সাহা বলেন, “প্রমা সত্যিই ব্যতিক্রম এক মেধাবী শিক্ষার্থী। এমন দারিদ্র্যের মধ্যেও জিপিএ-৫ অর্জন বিরল দৃষ্টান্ত। বিদ্যালয়ে মোট ১১ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে, তাদের মধ্যে অন্যতম প্রমা। আমি ব্যক্তিগতভাবে তার পাশে দাঁড়াতে চাই এবং বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও কথা বলব, যেন তাকে কিছু সহায়তা করা যায়। সমাজের দানশীল ও হৃদয়বান মানুষদের প্রতি আমার অনুরোধ, দয়া করে এমন একটি প্রতিভাকে যেন হারিয়ে যেতে না হয়।”
প্রমা এখনো বিশ্বাস করে, “ভগবান নিশ্চয়ই কোনো না কোনো উপায় করবেন”—এই আশা নিয়েই সে অপেক্ষা করছে কাউকে, যে হয়তো তার স্বপ্নকে সত্যি করতে পাশে দাঁড়াবে।